মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭

মানুষের জন্ম কখনোই অবৈধ হতে পারে না

মানুষের জন্ম কখনোই অবৈধ হতে পারে না



সবাই কি আর অব্রাহামের মত কপাল নিয়ে দুনিয়ার নাজিল হয!!
হয় না।অধিকাংশের কপালে থাকে- হয় ডাষ্টবিনে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত লাশের ভাগ্য নয়তো ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও আজীবন জারজ সন্তানের তকমা।
আব্রাহাম কিংবা এই সেদিনের একুশ (যাকে কুড়িয়ে পাওয়ার পর ১৫ দম্পত্তি আবেদন করেছিলেন অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য) তারা তো স্বেচ্ছায় এই ধরণীর বুকে নাজিল হতে চাননি। আমি আপনি আমরা আমাদের ক্ষণিকের মোহে সব ভুলে গিয়ে তাদের এই ধরণীতে ডেকে আনি। ব্যাস ঐ ডেকে আনা পর‌্যন্তই!তারপরের দায়িত্বটা কার ভাগে যাবে সেই সিদ্ধান্তে আসতে না পারবার কারণেই তাদের ছুঁড়ে দেই কখনো ডাষ্টবিনে, কখনো রাস্তার পাশের নর্দমায়। তারপর শিয়াল-কুকুর কেউ না কেউ তো দায়িত্ব নিয়ে তাকে সাবাড় করবেই! কি চমৎকার আমাদের দায়িত্ববোধ!
আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিবাহবর্হিভূত সন্তান জন্ম নেয়াকে মারাত্মক অন্যায় কাজ বলে মনে করা হয়। যে শিশুটি জন্ম নেয় তাকে “পাপের ফল” বলে অভিহিত করি। তার নামকরণ করা হয় জারজ, ইংরেজি জানা লোকের অহরহ দেয়া নিকৃষ্টতম গালি “বাস্টার্ড” বা অবৈধ সন্তান! এরচেয়ে মানব সমাজে বিকৃত শব্দ যেন আর কিছুই হতে পারে না। নারী-পুরুষের মিলনে যে মানব শিশুটি জন্মালো তাকেই বলা হচ্ছে অবৈধ। কেন? একটাই কারণ, শিশুটির জন্মদাতা-দাত্রী দুইজনেই সমাজ ও ধর্ম স্বীকৃত নিয়ম মেনে বিয়ে করে তাকে পয়দা করেনি। আমরা এমনই এক সমাজ বানিয়েছি যেখানে নিস্পাপ শিশুদেরও নাম দিয়েছি, জারজ কিংবা অবৈধ!

মানুষের জন্ম কখনো অবৈধ হতে পারে না যে কারণে

যে বিশাল ভারতবর্ষ বা ভারতীয় উপমহাদেশের অধিবাসী আমরা, সেই ভারত নামকরণ হয়েছিল যার নামে তিনি রাজা ভরত। রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার শুধুমাত্র “আংটি বদল” সম্পর্কের ফসল ছিলেন রাজা ভরত। অন্যদিকে কুমারী মাতা মরিয়মের সন্তান যীশু বৈধ বলে ধরা হলে তো অবৈধ সন্তান শব্দটিই পৃথিবীর সকল অভিধান থেকে মুছে ফেলা উচিত।
পাপ যদি আমি করি তো পাপের সাজা আমারই পাওয়া আবশ্যক, ন্যায়বিচারের ধারণা তো সেটাই বলে। তাহলে আমার কৃত্য পাপের সাজা কেন নিষ্পাপ কাউকে ভোগ করতে হবে? বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেও কোন মেয়ে যদি সন্তানের মা হয়ে পড়েন তাহলে তো সেই সন্তান অবৈধ বা জারজ হওয়ার সুযোগই নেই। মায়ের পেট থেকেই তো বের হয়েছে শিশুটি, কোন পশুর পেট থেকেতো নয়। তাহলে তাকে অবৈধ বলি কি করে! বিয়ে- সেটাতো মানবসমাজের উষালগ্নেও এর অস্তিত্ব ছিলনা। তাহলে কি সেই সময়কার সবাই অবৈধ আর জারজ ছিলেন? জানি, বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবার মত অসংখ্য মানুষ অগণিত যুক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়বেন আজ এই লেখার বিপক্ষে, আমার বিরূদ্ধে। তারপরও বলবো শুধুমাত্র বিয়ে বহির্ভূত সন্তান জন্ম যদি অবৈধ বা জারজ সন্তানের মাপকাঠি হয়ে থাকে তাহলে আমাদের আদিপুরুষ হযরত আদম (আঃ) কে কি নামে অভিহিত করা উচিত আমাদের? উনার তো না ছিলেন পিতা না ছিলেন মাতা! বলবেন হয়তো উনাকে তো সৃষ্টিকর্তাই তৈরী করেছিলেন। আমারও আপত্তি নেই একবিন্দু সেটা মেনে নিতে। তাহলে বর্তমান সময় যাদের অবৈধ বা জারজ বলছি তাদের সৃষ্টিকর্তা কে? যতদূর বুজি সৃষ্টিকর্তা কখনোই দ্বৈতনীতি অনুসরণ করেন না। অনুসরণ করি আমরা- তার সৃষ্টি যারা। আমরা আমাদের স্বার্থে প্রথার জন্ম দেই, আইন তৈরী করি। আবার সেই প্রথা বা আইন ভাংগার জন্য সৃষ্টিকর্তা ধরণীতে নেমে আসেন না, আমরাই ভাংগি। 
আসলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বাধ্য করে আমরা কি করবো কি মানবো কিভাবে চলবো। বৈবাহিক সম্পর্ক বহির্ভূত নারীর সন্তান প্রসবের বিষয়টি আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে চাইনা বলেই, এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটাও মারাত্মক কঠোর বলেই কত নবজাতক ডাষ্টবিন বা নর্দমায় শিয়াল কুকুরের আহারে পরিণত হয় তার হিসেব কে রাখে? সামাজিকভাবে বদনামের ভয়ে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে ধর্ণা দিয়ে, এ্যাবরশন করাতে গিয়ে কত নারী অকালে মৃত্যূর কোলে ঢলে পড়েন তার পরিসংখ্যানও পাওয়া যাবেনা কোন অধিদপ্তরেই। সেটা রাখাও যেন আরেক বিরাট অপরাধ, লজ্জার ব্যাপার।
একটা শিশুর জন্ম সবসময় আমাদের সমাজে আনন্দের সংবাদ হওয়া দরকার ছিল। অসংখ্য নারী কি করে বিয়ের পূর্বেই মাতৃত্বের সাধ নিচ্ছেন বা নিতে বাধ্য হচ্ছেন কোন পরিস্থিতিতে তা আমরা কখনোই বিবেচনায় রাখিনা, রাখতে চাইনা। বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক যতই ঘৃণিত হোক না কেন পারবেন কি এই সমাজের আড়ালে আবডালে যে ঘটনাগুলো ঘটে থাকে তার সবগুলোকে রুখে দিতে? পারবেন কি বিয়ের আগে নারীর প্রতি পুরুষের টান কিংবা পুরুষের প্রতি নারীর আকর্ষিত হওয়ার মত কারণগুলোকে স্থিরভাবে আটকে রাখবার কোন ব্যবস্থা করতে? জানি এটা কখনোই সম্ভব নয়। একটা বিষয় সম্ভব, তা হলো মানষিকতা আর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
এই লেখায় কোন ভাবেই বৈবাহিক রীতিনীতি আর দাম্পত্যের সম্পর্ককে অনুৎসাহিত করতে চেষ্টা করিনি। আধুনিক সমাজব্যবস্থার প্রয়োজনেই বিবাহের মত একটি সামাজিক পারিবারিক বন্ধনের সৃষ্টি হয়েছিল যাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা। ঠিক একই ভাবে আধুনিক জীবনধারায় বিবাহপূর্ব নারী-পুরুষের মেলামেশাও আটকে রাখা বা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। জন্মদাতা-দাত্রীর বৈবাহিক সম্পর্ক নেই বলে একটি শিশুকে কোন ভাবে আমরা বঞ্চিত করতে পারিনা তার প্রাপ্য অধিকারগুলো থেকে। ডিভোর্সড বাবা-মায়ের সন্তানের মত তারও অধিকার আছে বেঁচে থাকবার, সমাজে বড় হবার, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। আমাদের সমাজের অবিবাহিত মায়েদের মাথায় যদি পরনিন্দার ভার, শাসন, লোকলজ্জা আর সমাজপতিশ্রেণীর প্রদত্ত গুরুদন্ডের কঠিন প্রয়োগের ফলে পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার মত অবস্থা তৈরী না হতো তবে হয়তো তারা কখনোই তাদের নবজাতক শিশুটিকে পরিত্যাগ করতেন না। হয়তো শিশুকে ঠেলে দিতেন না রাতের আঁধারে মৃত্যূর দুয়ারে। আর তখন এই সমাজ হতে পারতো আরো অনেক অনেক বেশী শিশুবান্ধবও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷

What you say What you do, Think twice before...

- দোস্ত ! দেখ মালডা চরম না ?? - কোনটা ? ও...এইডা ! এইডার কথা কইতে পারিনা, তয় তোগোর বাড়িতে একটা চরম মাল  আছে ! - আমাগোর বাড়িতে ! ক...