সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭

আস্থা ছিল, এই হাতটা অন্তত কখনো তোমাকে হারাতে দেবেনা

আস্থা ছিল, 
এই হাতটা অন্তত কখনো তোমাকে হারাতে দেবেনা





এই শুনছো?

কাল বিকেলে কি পাগলামীটাই না করলে তুমি! 
গিয়েছিলাম খুব কাছে থেকে শেষ বিকেলের সূর্য ডুবা দেখবো বলে। আশুলিয়ার বেঁড়িবাঁধ ধরে বিরুলিয়ার নতুন ব্রীজের লাগোয়া সেই পুরাতন চেনা জায়গাটিই তোমার প্রথম পছন্দের। তাই হাতে হাত রেখে সেদিকেই এগুচ্ছিলাম দু’জনে। হঠ্যাৎ তোমার মাথায় বুজি ভুত চাপলো! বললে আজ আর সেখানে নয়, তার বদলে এই ঢালু জায়গাটায় বসেই সূর্য ডুবা দেখবে।পরে বললে না বসবে না, এখানেই হাঁটতে হাঁটতে ইচ্ছেটা পূরণ করবে আজ। আর সেখানেই যা করলে তুমি!

নদীর তীরে উঁচু ঢালে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিলাম দু'জন। ভালোই লাগছিলো, খানিকটা ঠান্ডার আবেশও ছিল। আর তখনই তুমি বায়না ধরলে অস্তনমিত ঐ সূর্যটাকে ছোঁয়া তোমার চাইই চাই! এমন পাগলামীও বুজি করে কেউ?


অনেক বারণের একটাও শুনলেনা তুমি। উল্টো শাসালে এই বলে যেন আর একটাও কথা না বলি।
বলে যে আর লাভ হবেনা সেটা আগেই বুজতে পেরেছি। তোমার জিদ্টাকে তো আমি চিনিই হাড়ে হাড়ে। কেন জানি তোমার শান্ত রূপের চেয়ে ঐ জেদী মেয়ের রূপটাকেই আমিও ভীষণ ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছিলাম আরো আগে থেকেই। তাই হার মানতেই হলো।

আমি হার মানতেই তুমি উঁচু ঢালের একেবারে কিনারায় এসে দাঁড়ালে। আরো খানিকটা সামনে ঝুঁকলে ঐ সূর্য ছোঁবে বলে। আর তখনই ঘটালে বিপত্তিটা!
সামনে ঝুঁকতে গিয়ে টাল সামলাতে পারলে না, প্রায় পড়েই যাচ্ছিলে নদীর বুকে। আর খানিকটা হলেই হয়তো সূর্য ছোঁয়ার সাধটা তোমার চিরতরে মিটে যেত। আর আমি, জলের বুকে সূর্য ডুববার বদলে তোমাকে ডুবতে দেখার সাক্ষী হয়ে যেতাম!

ভাগ্যিস হাতের উপর আমার আস্থা ছিল, এই হাতটা অন্তত কখনো তোমাকে হারাতে দেবেনা। দেয়নি কালও।

মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

নিদ্রাহীন এক অপরাধী চোখে

নিদ্রাহীন এক অপরাধী চোখে



আমি এখনো ঠিক সেই জায়গাতেই আছি
বিশ্বাস যদি না করো তো একবার এসে
নিজ চোখেই দেখ না,
ঠিক সেখানেই আটকে আছি তুমি হাত ছেড়ে দিয়েছিলে যতখানি এসে,
তারপরও আগের মতই 
বলতে পারো আগের চেয়েও বেশীই ভালবাসি তোমাকে।

মাঝে মাঝে পুরনো এ্যালবাম খুঁজি
খুঁজে পেলে দু’জনের আগের ছবিগুলো দেখি আর ভাবি,
পাশের মানুষটার কাছেই তো ডিপোজিট করেছিলাম আমার যত ভালবাসা।
এখন প্রায় রাতেই নিদ্রাহীন জেগে বসে থাকি 
যখন মনে পড়ে সুখের স্বপ্নগুলো তো হারিয়েই গেছে,  
তখন নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি-
কোন এই যন্ত্রণার হাজার রাত কিনেছিলাম
ভাললাগার আনন্দ আর স্বস্তিটাকে বিকিয়ে দিয়ে?

লক্ষবার চেষ্টা করেও চোখের পানি  
যখন আর আটকাতে পারি না, 
তখন ভীষন অপরাধী ভাবি নিজেকেই নিজে।

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

মনিষা পৈলান : এসিড সন্ত্রাসে ঝলসানো এক সাহসী কণ্ঠ

মনিষা পৈলান : এসিড সন্ত্রাসে ঝলসানো এক সাহসী কণ্ঠ





অনেকেই নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে, বেশ কিছুদিন ধরেই ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসিডে ঝলসে যাওয়া এক নারীমুখের ছবি ভাইরাল হয়ে ঘুরছে। হাতে একটা প্লেকার্ড- আমি মুখ ঢাকবো না। অন্য অনেকের মত আমিও ছবিটা শেয়ার করলাম আমার নিজের ওয়ালে। আমার দেখাদেখি আমার অনেক বন্ধুরাও শেয়ার দিলো। অনেকে তো এই ছবিকে নিজেদের প্রোফাইল পিকচারই বানিয়ে নিয়েছে।

অনেক কিছুতেই আমার তেমন কৌতুহল বা আগ্রহ সচরাচর জন্মায় না। আর একবার যদি কিছুতে আগ্রহ জন্মায় তবে তার মাত্রাটা বরাবরই একটু বেশী হয়। কোন কিছুতে কিংবা কারো বিষয়ে আগ্রহবোধ জন্মালে আমি তার অনেক গভীরে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ছবির মুখটির নাম মনিষা পৈলান। নাম লিখে সার্চ দিতেই উনার ফেসবুক আইডি আমার সামনে দেখা দিল। সাহস করে রিকোয়েস্ট পাঠালামও। আর এই ব্যাপারে আমার নিজের কনফিডেন্স লেভেল সম্পর্কে আমার যথেষ্ট দৃঢ় আস্থা আছে যে আমার রিকোয়েস্ট বৃথা যাবেনা। সচরাচর খুব একটা রিকোয়েস্ট কাউকে পাঠাইওনা। অনেক যাচাই-বাছাই করে ভাল লাগলে তবে পাঠাই। আর জানি সেটা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবেনা, একসেপ্ট হবেই। হয়েছেও আগে, এবারও হলো।

মনিষা পৈলান আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলেন। উনার প্রোফাইল আর ওয়াল ঘুরে দেখতে শুরু করলাম। আগ্রহটা আরো বাড়লো। যেহেতু লেখালেখির কাজেই জড়িত তাই মনে ইচ্ছা জাগলো উনাকে নিয়েই কিছু একটা লিখি। কিন্তু লিখবো কি? শুধু ˝আমি মুখ ঢাকবো না˝ এনিয়েতো বেশী দূর এগুনো যাবেনা। গোড়া থেকে কাহিনীটা জানতে হবে। সাহস করে উনার ইনবক্সে নক করলাম- আপনাকে নিয়ে লিখতে চাই, সংক্ষেপে যদি আপনার দূর্ঘটনার কাহিনীটা আমাকে বলতেন। খানিকটা অবাক করে দিয়েই তিনি রিপ্লাই দিলেন, কিছুক্ষণ পর বলছি। তারকিছু সময় পরেই তিনি জানালেন কেমন করে কি হয়ে গেল!

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কলকাতার জয়ানগরের বাসিন্দা মনিষা পৈলান। অন্যসব মেয়েদের মত জীবন কাটছিল স্বাভাবিকভাবেই। সময়টা ছিল ২০১৫ এর নভেম্বর মাস। মাত্র বি.এ কমপ্লিট করলেন মনিষা। পরীক্ষার পরপরই একটা কম্পিউটার সেন্টারে চাকুরীও নিলেন। কিন্তু বখাটে ছেলের কাছে মেয়ের এই স্বাভাবিক চলাটা পছন্দ হবে কেন! একসময় পাশের বাড়ীর এক ছেলে জ্বালাতন শুরু করে দিলো। প্রেমের প্রস্তাব দিলো মনিষাকে। প্রত্যাখ্যান করলেন মনিষা। আর সেটাই কাল হলো মনিষার জীবনে। পরপর আরো কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর একদিন বিকালে পাড়ার আরো চার ছেলের সাথে মনিষার পথ আটকায় তারা। মনিষা তখন অফিস শেষে বাড়ী ফিরছিল। আর তখনই ছেলেটা তার কাছে লুকিয়ে রাখা এসিডের বোতল খুলে এসিড ছুঁড়ে মারে মনিষার মুখ লক্ষ্য করে। মুহুর্তেই ঝলসে যায় মনিষার মুখমন্ডল। মারাত্মক আহত অবস্থায় মনিষাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় হাসপাতালে। মুখের পুরোটাই ঝলসে গেছে। দুই চোখের মধ্যে ডান চোখটা অনেক যুদ্ধ করে রক্ষা করতে হয়েছিল। যথারীতি পুলিশ কেইস হলো। মূল আসামী ধরা না পড়লেও বাকী ছেলেগুলো পুলিশের হাতে আটক হয়। মামলা কোর্টে উঠে। একসময় ঐ চার ছেলেও জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। এখন মনিষার চোখের সামনেই ঘুরে বেড়ায় তারা। মূল আসামীর কথা পুলিশের কাছে জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, হয়তো দেশের বাইরে চলে গেছে তাই ধরা  যাচ্ছেনা। অথছ দেশেই আছে ছেলেটা।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে চিকিৎসা শেষে মনিষা আবার ফিরে এলো। কিন্তু এবার শুরু হলো মনিষার জীবনের অন্য আরেক কঠিন অধ্যায়। পাড়ার লোকজন বলতে শুরু করলো মনিষাই খারাপ মেয়ে তার চরিত্রের সমস্যা আছে। সেই অপরাধী। নিশ্চয়ই এমন কিছু সে করেছিল যার কারণে ঐ ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে এইকাজ করেছে। নানা ধরণের অপবাদের বাণে জর্জরিত করে তুলছিল সমাজের লোকেরা। বাঁচার আগ্রহটাই যেন হারাতে বসেছিল মনিষা। কিন্তু না, হার মানেননি মানিষা পৈলান। নতুন করে ফিরে দাঁড়ালেন। এখন আবার ভর্তি হয়েছেন মাষ্টার্স এ। 

মনিষার কাহিনীতে হয়তোবা বিশেষ এমন কিছু নেই যা কাউকে ততোটা আগ্রহী করে তুলতে পারে তার ব্যাপারে। এসিডের শিকার হওয়া নারী ভারত-বাংলাদেশে আরো অনেকেই আছেন। তাদের অনেকেই আবার প্রতিষ্ঠিতও হয়েছেন। কিন্তু আমি আগ্রহী হয়েছি, আগ্রহী হয়েছিলাম উনার মুখ না ঢাকবার দৃঢ় সংকল্প দেখে। এর আগে কোন এসিডের শিকার কে দেখিনি মুখ খোলা রেখে চলাফেরা করতে। ওড়না বা অন্য কিছু দিয়ে ঝলসানো মুখ আড়াল করেই বাকীরা জীবনযাপন করছেন। আর মনিষার এই ব্যতিক্রমটাই আমাকে আগ্রহী করে তুলেছিল মনিষা সম্পর্কে। সত্যিই তো। মনিষা কেন মুখ ঢেকে চলবে? মুখ ঢেকে যদি চলতেই হয় তাহলে অপরাধী যারা তারা ঢাকবে। মনিষা জানালেন, এসিডে আমার চোখ মুখ ঝলসে গেছে,  চেহারা হয়ে গেছে বিকৃতি। এ কারণে জীবনে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আমার। কিন্ত   একটুও দমিনি আমি। এত লাঞ্ছনা সহ্য করেও ভাবিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে। প্রথম প্রথম কাউকে না পেলেও এখন আমার পাশে অনেকেই আছেন। অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার জন্য যা যা করণীয় তার সব আমি করবোই। মনিষার এই দৃঢ় সংকল্প নিশ্চয় অনুপ্রাণিত করবে আরো অনেককেই।

নারীর প্রতি সহিংসতার নৃশংসতম একটি ধরন হচ্ছে এসিড নিক্ষেপ। এসিড সন্ত্রাসের পরিণতিতে একজন নারীর শারীরিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয় তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। আমরা এক্ষেত্রে শুধু সহানুভূতি জানাতে পারি, সমব্যাথী হওয়া সম্ভব নয়। এসিড নামক রাসায়নিক এই  দাহ্যপদার্থটির ভয়াবহতা এত ব্যাপক যে এটি চামড়ার নিচের টিস্যু, এমনকি  হাড়ও গলিয়ে দিতে সক্ষম। এসিড সন্ত্রাসের যে কোনো ঘটনা মানবিক চেতনাকে আহত করে।

ভারতের মতো দেশে যেখানে নারী ধর্ষণের ঘটনা নিত্য সেখানে এসিড নিক্ষেপের কথা নতুন নয়, অত্যন্ত স্বাভাবিক। এসিড হামলার ক্ষেত্রে ভারতে পুলিশ ও প্রশাসনের মনোভাবের কড়া সমালোচনার কথাও শোনা যায়। অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ গড়িমসি করে। আদালতে মামলাও সহজে শেষ হতে চায় না। ভারতে এ বিষয়ে এখনো যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে। কর্তৃপক্ষও সময় নষ্ট করছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এসিড বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার নির্দেশ দেয়ার পরও এখনো সেখানে সহজেই এসিড কেনা যায়। বাংলাদেশে এসিড সন্ত্রাসজনিত অপরাধকে এখন যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য করা হয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। কিন্তু আইন যথেষ্ট হলেও যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টি সেভাবে পুরোপুরি নিশ্চিত করা না গেলেও বাংলাদেশে এসিড সন্ত্রাস এখন অনেকখানিই নিয়ন্ত্রণে আছে বলা যায়। সেই তুলনায় ভারতীয়রা অনেক পিছিয়ে রয়েছে।  

আমরা আশা করবো খুব দ্রুত মনিষার মূল আসামীকে কলকাতা পুলিশ প্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। বিচারান্তে উপযুক্ত সাজা পাবে মূল আসামী ও তার সহযোগী দোসরেরা। মনিষার আগেও আরো অনেক ভারতীয় নারী এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য যে বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনার এক বোনও এর শিকার হয়েছিল, আলোচিত হয়েছিলেন লক্ষ্মী নামের এক নারীও যিনি পরবর্তীতে এসিড আক্রান্তদের নিয়েই কাজ করতে শুরু করেন। এর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পুরষ্কৃতও হয়েছিলেন লক্ষ্মী। অনেকের মামলার রায় শেষে আসামীরা সাজা খাটছেন, অনেকের আবার মামলা চলমান রয়েছে। এসিড সন্ত্রাসের প্রতিটি মামলা যেন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় এবং যথাযথ তদন্ত ও আইনী কারবার শেষে প্রতিটি আসামীর উপযুক্ত সাজা নিশ্চিত হোক- এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭

এই কালের প্রেম ভালবাসা - বোনাস প্রাপ্তি প্রতারণা আর আত্মহত্যার সংস্কৃতি

এই কালের প্রেম ভালবাসা -
বোনাস প্রাপ্তি প্রতারণা আর আত্মহত্যার সংস্কৃতি




মানুষের জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ রহস্যাবৃত অধ্যায় যদি কিছু থাকে তো আমার ধারণা সেটি প্রেম ভালবাসা বিষয়ক অধ্যায়টিই। সৃষ্টিকর্তা মানবকে তৈরীর সময় প্রথমে নাকি শুধু আদমকেই সৃষ্টির মনস্থির করেন। পরবর্তীতে বেচারী আদমের অলস সময়গুলো পার করানোর সুবিধার্থে আদমের কান্নাকাটি দেখে বাধ্য হলেন তার জন্য একজন নারী সাথীর ব্যবস্থা করতে। আর সেই থেকেই জন্ম নানা আনন্দ আর বেদনাময় উ্ভয়ের সমষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া প্রেম ভালবাসা নিয়ে নানা কাহিনীর। যা ্আজও তো বটেই, সৃষ্টির শেষ দিন অবধি চলমান থাকবে।

মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মূলত ভালোবাসার উৎপত্তি। ভালোবাসাটা মানুষের আবেগ অনুভূতির একটা স্বাভাবিক রূপ। বিশেষ কোন বিষয়ের ব্যাপারে মানুষের অন্যরকম এক বিশেষ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশের নামই হচ্ছে ভালোবাসা। শুধু যে পার্থিব কিংবা হাতের কাছের কিছুর প্রতিই মানুষের ভালবাসা জন্ম নেয় তা নয়, অনেক সময় কখনোই নাগাল পাওয়া সম্ভব নয় এমন কিছুর প্রতিও ভালবাসার জন্ম হতে পারে। আকাশে চাঁদের মোহনীয় মায়া আপনাকে আকর্ষণ করছে বলেই চাঁদের প্রতি আপনার ভালবাসার জন্ম হয়েছে, অথছ আপনি ভাল করেই জানেন চাঁদের পক্ষে আপনাকে ভালোবাসা অসম্ভব ব্যাপার।
কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে অবশ্যই ছেলে-মেয়ে দু'পক্ষেেই সম্মতির দরকার পড়ে। শুধু এক তরফা প্রেম সম্ভব নয় যদিও one sided love বলেও একটা বাক্য হরহামেশাই শোনা যায়। অনেকেই বলে থাকেন, প্রেমের আবেদন নাকি ভালোবাসার চাইতেও আরো অনেক অনেক বেশি হয়ে থাকে। রাস্তায় পড়ে থাকা কোন ভিখারী কিংবা অসহায় একজন মানুষের প্রতিও ভালোবাসা জন্মাতে পারে, কিন্তু তাকে নিশ্চয় প্রেম বলে অভিহিত করা যাবেনা। প্রেমটা তখনই সম্ভব হয়ে উঠবে যেসময় ছেলে মেয়ে উভয়ের দিকে থেকে একই সময় সাড়া মিলবে একসাথে হাতে হাত রেখে পথ চলবার। কমিটমেন্ট ভালবাসার ক্ষেত্রেও চলে আসে, তবে প্রেমের ক্ষেত্রে কমিটমেন্ট অবশ্যই ভালোবাসা থেকেও অনেক বেশী দৃঢ়তার হতে হবে।

হালের ক্রেজ অনলা্ইনে পরিচয় এরপর গভীর সম্পর্ক:


চোখে চোখেই কথা হোক, মুখে কিছু বল না- প্রেমের সেইদিনটা আজ বলতে গেলে অতীত। এখন চোখে চোখে নয়, কথা হয় মোাবাইলের বাটন বা টাচস্ক্রীণ চেপে কিংবা কম্পিউটারের মাউস ক্লিক করে। প্রেমপত্র তো যাদুঘরের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছে সেই কবে। নেটিজেনদের হাত ধরে প্রেমও এখন অনলাইন। অনলাইনে পরিচয়, অনলাইনেই ডেটিং, মন দেওয়া নেওয়া এমন কি সেক্স চ্যাটও!

বাস্তবে চোখের দেখা থেকে প্রথম ভাললাগা এরপর ভালোবাসা আর শেষে উভয়ের সম্মতিতেই প্রেম হয়। কিন্তু এই কারণেই সম্পর্ককে চুড়ান্ত রূপ অবধি টেনে নেয়া যাবে এটাই নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না কেউই। সেক্ষেত্রে অনলাইনে পরিচয়ের পর সেটাকে সম্পর্কে রূপ দেয়ার বিষয়টা অনেকটা আরো বেশীই অনিশ্চিত বলা যায়। একটা সময় টেলিফোনে বিয়ের কথা শুনতাম। ছেলে বা মেয়ে দেশের বাইরে থাকে, আসবার সুযোগ ঐ মুহুর্তে হয়তো হচ্ছেনা। তাই টেলিফোনে কলেমা পড়ে আর অপরপ্রান্তে শুনিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হতো। কিন্তু সেখানেও ছেলে-মেয়ের সরাসরি দেখা না হলেও মুরুব্বীদের সরাসরি দেখা সাক্ষাৎ কথাবার্তার মাধ্যমেই সম্পর্কটা নির্দিষ্ট হতো। 

সারা বিশ্বে অনলাইনে ছড়িয়ে আছে ফাঁদ। কেউ ভুল করে জড়িয়ে যায় আর কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবেই। অনেকে অনলাইন রোমাঞ্চে জড়িয়ে যান কেবলমাত্র সময় কাটানোর জন্য, আবার কেউ কেউ থাকে ভীষন সিরিয়াস। লিখে লিখে প্রেম করা আর শুধু ছবি দেখেই প্রেমে পড়া- ব্যাপারটাই কেমন যেন অদ্ভুত! আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না। আর তাই আনলাইনে রিলেশনশীপ গড়বার আগে বেশকিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার। অপরপক্ষ অনলাইনে যা বলেন লিখেন সেটার সাথে বাস্তবের মিল কত টুকু তা প্রথমেই বিচার করা উচিত। শুরুতেই আবেগের বন্ধনে জড়িও হওয়া ঠিক হবে না। চুড়ান্ত সম্পর্কের সিদ্ধান্তে যাবার আগে উচিত হবে প্রাথমিক পরিচয় পর্ব সম্পন্ন হবার পর নিজেরাও ব্যক্তিগত ভাবে দেখাসাক্ষাৎ করে সময় কাটাতে পারেন শেষ অবধি একটি ভাল সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে। অবশ্য এক্ষেত্রে মেয়েদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। অদেখা যাকে বিশ্বাস করে আপনি দেখা করতে যাচ্ছেন সে একলা পাবার পর যেন কোন ধরণের সীমালঙ্ঘনের মত কাজ করে বসতে না পারে।

প্রেমের সম্পর্কে প্রতারণার ফাঁদ:


আমার ধারণা সম্ভবত প্রেমের চাইতে নিরাপদ আর কার্যকর দ্বিতীয় কোন অবলম্বন নেই যা দিয়ে মেয়েদের প্রতারিত করে ফাঁদে ফেলা সম্ভব। একবার প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বার পর একটি মেয়ে বলতে গেলে অনেকটা জড় বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়। এই সময় তারা বিবেক-বুদ্ধি খাটানো বাদ দিয়ে যে কাজগুলো করে ফেলে তা তারা তাদের জীবনের অন্য কোন অধ্যায়ে এতোখানি করেনা। প্রেমের মায়াজাল তাদের এমনভাবে জড়িয়ে ফেলে যে দেখা যাবে মেয়েটি যেন মেরুদন্ডহীন প্রাণীতে পরিণত হয়ে সোজা হয়েও আর হাঁটতেও পারে না, ঝুঁকে যায় ছেলেটির শরীরে, ছেলেটির দুইহাত ধরেই হাঁটতে চায়। নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা সবকিছুই সঁপে দেয় প্রেমিক পুরুষের কাছে। 

পুরুষের প্রেমে আসলেই মেয়েরা ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগটাই গ্রহণ করে পল্টিবাজ প্রতারক ছেলেরা। একটা ঘোরের মাঝে পড়ে মেয়েরা তখন নিজের কথা নিজের সত্ত্বার কথাই ভুলে যায়। নিজের কথা ভাবেনা, চিন্তা করে প্রেমিকের ভাল মন্দ বিষয়ে। নিজ পরিবারের সদস্যদের বাইরে সে তখন ছেলেটির পরিবারের সদস্যদের আপন ভাবতে শুরু করে দেয়। আর এই সুযোগে প্রতারক প্রেমিক প্রেমিকার সর্বকিছু কেড়ে নিতে দ্বিধা করেনা। কোন কোন মেয়েতো প্রতারিত হওয়ার পরও ভাবতে পারেনা সে প্রতারিত হচ্ছে বা হয়েছে। 

প্রেমের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যে কত মেয়ে সর্বশান্ত হয়েছে তার খবর আমরা কয়জন আর রাখি। কত মেয়ে প্রেমের নামে শারীরিক হয়রানির শিকার হচ্ছে, দুঃসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কতজন মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে তার সংখ্যা কোন পরিসংখ্যানেও পাওয়া যায়না কখনোই। শুধূ যে ছেলেরা্ই প্রতারক তা কিন্তু নয়, প্রতারণা মেয়েরাও করে থাকে। হয়তো সার্বিক হিসেবে এর পরিমাণ বা মাত্রা ততোটা বেশী নয়। 


পরিশেষে বলবো,
সত্যিকার অর্থে ভালবাসা আর প্রেমের সুখ চাই। অনন্ত সুখের বাহন হোক ভালবাসা আর প্রেমের সম্পর্কটা। যেখানে প্রতারক প্রেমিক কিংবা ছলনাময়ী প্রেমিকা থাকবেনা, দুইজনেরই লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকবে সৎ আর মানবিক গুণে ভরপুর। আর প্রেমের সম্পর্কটা যদি সত্যিই মানবিক হয়ে থাকে, চুড়ান্ত পরিণতিটাই যদি দুইজনেরই আকাংখা আর সদিচ্ছা হয়ে থাকে তবে সেখানে ছুঁয়ে দিলাম কি শুইয়ে ফেললাম কোন বাঁধার বিষয় হয়ে থাকেনা। এমন কোন সম্পর্ক আর দেখতে চাইনা যেখানে প্রতিটি পদে পদে কেবল প্রতারণার ফাঁদ। আর সেই ফাঁদের চুড়ান্ত পরিণতিতে থাকবে এমন কোন একটি  সুইসাইড নোট যাতে লিখা থাকবে-
আমি যদি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাইহয়তো সেদিন তুমিও আমাকে আর মনে রাখবে না। আমি জানি সেদিন শুধু দুর  আকাশের নক্ষত্রগুলো আমার কথা স্মরণ করবে কারণ তারাই ছিল আমার প্রকৃত বান্ধব। ওরাই আমার সুখ দুঃখের প্রকৃত ভাগীদার ছিল, তারা আমার চোখে কান্নার জল যেমন দেখেছে তেমনি ঐ চোখের স্বপ্নগুলোর ও স্বাক্ষী তারাই। যদি কখনো আমার কথা মনেই পড়ে যায় তোমার তাহলে পারলে ঐ নক্ষত্রদের কাছ থেকেই জেনে নিও কতটা ভালবেসেছিলাম তোমাকে, কতটুকু বিশ্বাস করেছিলাম তোমাকে।

শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭

শুধু কি সন্তানই ভুল করে? আমাদের অভিভাবকদের কোন ভুল নেই?

শুধু কি সন্তানই ভুল করে?

আমাদের অভিভাবকদের কোন ভুল নেই?



আমরা হয়তো ভুলেই গেছি সন্তানের চাইতেও আমাদের ভুলটা কতবেশী আর কত মারাত্মক!

আমাদের প্রথম ভুলটাই অন্য অনেকগুলো ভুলের জন্মদাতা। আমরা ভুলে যাই আমি জন্ম দিয়েছি সন্তানের, সন্তান আমাকে নয়। তার ভুল হতেই পারে, ভুল রাস্তায় পা সে রাখতেই পারে যেকোন সময়। আর ভুলটা সে তখনই করবে যখন আমরা মা-বাবা হিসেবে তাকে কোনটা ভাল কোনটা খারাপ এর পরিপূর্ণ ধারণাটা দিতে ব্যর্থ হবো।

বলতে পারেন, অনেক রকম চেষ্টাই তো করেছি কিন্তু তারপরও মেয়ে বা ছেলেটা ঠিক হচ্ছেনা। আমি বলবো এখানেও ভুলই হচ্ছে। কারণ এতচেষ্টা করেও যাতে কাজ হচ্ছেনা তাহলে আপনি বুজতেই পারছেন না আপনার চেষ্টার কোথায় গলদ রয়ে গেছে।

আমাদের সমাজের অনেক মা-বাবাই মনে করেন তাদের সন্তানের কৃতিত্বের পেছনে, সন্তান অনেক কিছু জানার-বুঝার পেছনে শুধুমাত্র তাদেরই অবদান রয়েছে। অন্যের বা অন্যকিছুর অবদান তারা অনায়াসে অস্বীকার করেন।অথছ  সন্তানের ভুলের দায় নিজেদের গায়ে নিতে নারাজ। অভিযোগের সব তীর তার দিকেই ছুঁড়ে দিই। সত্যকথা বলতে কি- আমরা আমাদের সন্তানের বন্ধুও হতে পারিনি, তারকাছে বিশ্বস্তও হতে পারিনি। একটি ছেলে বা মেয়ে তার অনেক কথাই খুলে বলতে ইতস্তত বোধ করে আপন বাবা-মায়ের কাছেই আজকাল। এর  প্রধান কারণ ইতিপূর্বে কখনো কোন এক সময় সন্তান বাবা-মাকে কোন বিশেষ বিষয়ে কিছু বলতে গিয়ে বাবা-মা’র কাছে গুরুত্ব না পাওয়া কিংবা হয়তো কোন ভুলের সাথে জড়িত না থেকে বাবা-মা’র কাছ থেকে ঐ ভুলের জন্য অযথা তিরষ্কৃত হওয়া।


আমাদের সম্পর্কের একটা দিক হলো টানাপোড়েন। এই টানাপোড়নের শুরু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মূলত মা-বাবার সাথে সন্তানের কিংবা সন্তানের সাথে সন্তানের সম্পর্কের টানাপোড়েনের অনেকটা সৃষ্টি হয়। প্রত্যেকটা মা-বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক হওয়া উচিৎ বন্ধুত্বপূর্ণ। যদি তা হয় তাহলে সন্তানের মানসিক বিকাশ ঘটবে দ্রুত। শুধু মা-বাবা কেন একটা পরিবারের সব সদস্যের ভেতর একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিৎ বলে আমি মনে করি। তাহলে পরিবার ভর্তি থাকবে আনন্দ। পরিবারের সবার যুক্তি পরামর্শে, সিদ্ধান্ত বা অনুভূতি আদান-প্রদানের মাধ্যমে পরিবার খুব সহজে যে কোন বিপদ কেটে উঠতে পারে। ছোট বড় সব ধরণের কাজে পরিবারের সবার মতামত নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের সমাজে এমন কিছু পরিবার আছে যেখানে মা-বাবার সাথে সন্তানের একটা দুরত্ব, ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের কিংবা বোনের সাথে বোনের বা ভাইয়ের একটা দুরত্ব বিরাজ করে। কিন্তু কেন? আমার মনে হয় এর পেছনেও মা-বাবার একটা ভূমিকা রয়ে যায়।

সন্তানদের সব কিছু বোঝার ক্ষমতা থাকেনা যা তার পিতা মাতা বুঝেন। যখন ভালো আর মন্দের মাঝামাঝি চলে বসবাস তখন সন্তানকে ভালোটা দেখানোর, বুঝানোর দায়িত্ব মা-বাবার। যদি মনে করেন আপনার সন্তান তার ইচ্ছামত চলুক সেখানে আপনি একটা ভুল করলেন। আর সন্তান যে ভুলটা করলো তাও আপনার জন্য। তাকে ভুল করতে সাহায্য করলেন আপনি বা আপনারা। কোন সন্তান যদি বড় হয়ে ভুল করে কিংবা কাউকে হিংসা করে অথবা ভুল করতে করতে বড় হয় তখন কোন কোন মা-বাবাকে বলতে দেখা যায়-‘সে এখন বড় হয়ে গেছে কি বলবো’! আসলে তো কি বলবেন! আপনি একবার ভেবে দেখেছেন?-যদি ছোট থেকে আপনার সন্তানকে সেভাবে গড়ে তুলতেন, কিছু বলে বলে আসতেন তাহলে হয়তো সে এই ভুলটা করতো না।


হয়তো বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে আপনার কাছে, তারপরও দৃঢ়তার সাথেই বলছি- আমি জানি ইনশাল্লাহ্ আমার একমাত্র ছেলে তার জীবনে কখনোই ধুমপান করবেনা, মাদকাসক্ত হবেনা। কারণ আমি আমার জীবন থেকেই তাকে এই দু'য়ের কুফলের শিক্ষাটুকু দিতে সক্ষম হয়েছিলাম।

What you say What you do, Think twice before...

- দোস্ত ! দেখ মালডা চরম না ?? - কোনটা ? ও...এইডা ! এইডার কথা কইতে পারিনা, তয় তোগোর বাড়িতে একটা চরম মাল  আছে ! - আমাগোর বাড়িতে ! ক...