শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭

এই কালের প্রেম ভালবাসা - বোনাস প্রাপ্তি প্রতারণা আর আত্মহত্যার সংস্কৃতি

এই কালের প্রেম ভালবাসা -
বোনাস প্রাপ্তি প্রতারণা আর আত্মহত্যার সংস্কৃতি




মানুষের জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ রহস্যাবৃত অধ্যায় যদি কিছু থাকে তো আমার ধারণা সেটি প্রেম ভালবাসা বিষয়ক অধ্যায়টিই। সৃষ্টিকর্তা মানবকে তৈরীর সময় প্রথমে নাকি শুধু আদমকেই সৃষ্টির মনস্থির করেন। পরবর্তীতে বেচারী আদমের অলস সময়গুলো পার করানোর সুবিধার্থে আদমের কান্নাকাটি দেখে বাধ্য হলেন তার জন্য একজন নারী সাথীর ব্যবস্থা করতে। আর সেই থেকেই জন্ম নানা আনন্দ আর বেদনাময় উ্ভয়ের সমষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া প্রেম ভালবাসা নিয়ে নানা কাহিনীর। যা ্আজও তো বটেই, সৃষ্টির শেষ দিন অবধি চলমান থাকবে।

মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মূলত ভালোবাসার উৎপত্তি। ভালোবাসাটা মানুষের আবেগ অনুভূতির একটা স্বাভাবিক রূপ। বিশেষ কোন বিষয়ের ব্যাপারে মানুষের অন্যরকম এক বিশেষ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশের নামই হচ্ছে ভালোবাসা। শুধু যে পার্থিব কিংবা হাতের কাছের কিছুর প্রতিই মানুষের ভালবাসা জন্ম নেয় তা নয়, অনেক সময় কখনোই নাগাল পাওয়া সম্ভব নয় এমন কিছুর প্রতিও ভালবাসার জন্ম হতে পারে। আকাশে চাঁদের মোহনীয় মায়া আপনাকে আকর্ষণ করছে বলেই চাঁদের প্রতি আপনার ভালবাসার জন্ম হয়েছে, অথছ আপনি ভাল করেই জানেন চাঁদের পক্ষে আপনাকে ভালোবাসা অসম্ভব ব্যাপার।
কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে অবশ্যই ছেলে-মেয়ে দু'পক্ষেেই সম্মতির দরকার পড়ে। শুধু এক তরফা প্রেম সম্ভব নয় যদিও one sided love বলেও একটা বাক্য হরহামেশাই শোনা যায়। অনেকেই বলে থাকেন, প্রেমের আবেদন নাকি ভালোবাসার চাইতেও আরো অনেক অনেক বেশি হয়ে থাকে। রাস্তায় পড়ে থাকা কোন ভিখারী কিংবা অসহায় একজন মানুষের প্রতিও ভালোবাসা জন্মাতে পারে, কিন্তু তাকে নিশ্চয় প্রেম বলে অভিহিত করা যাবেনা। প্রেমটা তখনই সম্ভব হয়ে উঠবে যেসময় ছেলে মেয়ে উভয়ের দিকে থেকে একই সময় সাড়া মিলবে একসাথে হাতে হাত রেখে পথ চলবার। কমিটমেন্ট ভালবাসার ক্ষেত্রেও চলে আসে, তবে প্রেমের ক্ষেত্রে কমিটমেন্ট অবশ্যই ভালোবাসা থেকেও অনেক বেশী দৃঢ়তার হতে হবে।

হালের ক্রেজ অনলা্ইনে পরিচয় এরপর গভীর সম্পর্ক:


চোখে চোখেই কথা হোক, মুখে কিছু বল না- প্রেমের সেইদিনটা আজ বলতে গেলে অতীত। এখন চোখে চোখে নয়, কথা হয় মোাবাইলের বাটন বা টাচস্ক্রীণ চেপে কিংবা কম্পিউটারের মাউস ক্লিক করে। প্রেমপত্র তো যাদুঘরের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছে সেই কবে। নেটিজেনদের হাত ধরে প্রেমও এখন অনলাইন। অনলাইনে পরিচয়, অনলাইনেই ডেটিং, মন দেওয়া নেওয়া এমন কি সেক্স চ্যাটও!

বাস্তবে চোখের দেখা থেকে প্রথম ভাললাগা এরপর ভালোবাসা আর শেষে উভয়ের সম্মতিতেই প্রেম হয়। কিন্তু এই কারণেই সম্পর্ককে চুড়ান্ত রূপ অবধি টেনে নেয়া যাবে এটাই নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না কেউই। সেক্ষেত্রে অনলাইনে পরিচয়ের পর সেটাকে সম্পর্কে রূপ দেয়ার বিষয়টা অনেকটা আরো বেশীই অনিশ্চিত বলা যায়। একটা সময় টেলিফোনে বিয়ের কথা শুনতাম। ছেলে বা মেয়ে দেশের বাইরে থাকে, আসবার সুযোগ ঐ মুহুর্তে হয়তো হচ্ছেনা। তাই টেলিফোনে কলেমা পড়ে আর অপরপ্রান্তে শুনিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হতো। কিন্তু সেখানেও ছেলে-মেয়ের সরাসরি দেখা না হলেও মুরুব্বীদের সরাসরি দেখা সাক্ষাৎ কথাবার্তার মাধ্যমেই সম্পর্কটা নির্দিষ্ট হতো। 

সারা বিশ্বে অনলাইনে ছড়িয়ে আছে ফাঁদ। কেউ ভুল করে জড়িয়ে যায় আর কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবেই। অনেকে অনলাইন রোমাঞ্চে জড়িয়ে যান কেবলমাত্র সময় কাটানোর জন্য, আবার কেউ কেউ থাকে ভীষন সিরিয়াস। লিখে লিখে প্রেম করা আর শুধু ছবি দেখেই প্রেমে পড়া- ব্যাপারটাই কেমন যেন অদ্ভুত! আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না। আর তাই আনলাইনে রিলেশনশীপ গড়বার আগে বেশকিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার। অপরপক্ষ অনলাইনে যা বলেন লিখেন সেটার সাথে বাস্তবের মিল কত টুকু তা প্রথমেই বিচার করা উচিত। শুরুতেই আবেগের বন্ধনে জড়িও হওয়া ঠিক হবে না। চুড়ান্ত সম্পর্কের সিদ্ধান্তে যাবার আগে উচিত হবে প্রাথমিক পরিচয় পর্ব সম্পন্ন হবার পর নিজেরাও ব্যক্তিগত ভাবে দেখাসাক্ষাৎ করে সময় কাটাতে পারেন শেষ অবধি একটি ভাল সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে। অবশ্য এক্ষেত্রে মেয়েদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। অদেখা যাকে বিশ্বাস করে আপনি দেখা করতে যাচ্ছেন সে একলা পাবার পর যেন কোন ধরণের সীমালঙ্ঘনের মত কাজ করে বসতে না পারে।

প্রেমের সম্পর্কে প্রতারণার ফাঁদ:


আমার ধারণা সম্ভবত প্রেমের চাইতে নিরাপদ আর কার্যকর দ্বিতীয় কোন অবলম্বন নেই যা দিয়ে মেয়েদের প্রতারিত করে ফাঁদে ফেলা সম্ভব। একবার প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বার পর একটি মেয়ে বলতে গেলে অনেকটা জড় বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়। এই সময় তারা বিবেক-বুদ্ধি খাটানো বাদ দিয়ে যে কাজগুলো করে ফেলে তা তারা তাদের জীবনের অন্য কোন অধ্যায়ে এতোখানি করেনা। প্রেমের মায়াজাল তাদের এমনভাবে জড়িয়ে ফেলে যে দেখা যাবে মেয়েটি যেন মেরুদন্ডহীন প্রাণীতে পরিণত হয়ে সোজা হয়েও আর হাঁটতেও পারে না, ঝুঁকে যায় ছেলেটির শরীরে, ছেলেটির দুইহাত ধরেই হাঁটতে চায়। নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা সবকিছুই সঁপে দেয় প্রেমিক পুরুষের কাছে। 

পুরুষের প্রেমে আসলেই মেয়েরা ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগটাই গ্রহণ করে পল্টিবাজ প্রতারক ছেলেরা। একটা ঘোরের মাঝে পড়ে মেয়েরা তখন নিজের কথা নিজের সত্ত্বার কথাই ভুলে যায়। নিজের কথা ভাবেনা, চিন্তা করে প্রেমিকের ভাল মন্দ বিষয়ে। নিজ পরিবারের সদস্যদের বাইরে সে তখন ছেলেটির পরিবারের সদস্যদের আপন ভাবতে শুরু করে দেয়। আর এই সুযোগে প্রতারক প্রেমিক প্রেমিকার সর্বকিছু কেড়ে নিতে দ্বিধা করেনা। কোন কোন মেয়েতো প্রতারিত হওয়ার পরও ভাবতে পারেনা সে প্রতারিত হচ্ছে বা হয়েছে। 

প্রেমের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যে কত মেয়ে সর্বশান্ত হয়েছে তার খবর আমরা কয়জন আর রাখি। কত মেয়ে প্রেমের নামে শারীরিক হয়রানির শিকার হচ্ছে, দুঃসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কতজন মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে তার সংখ্যা কোন পরিসংখ্যানেও পাওয়া যায়না কখনোই। শুধূ যে ছেলেরা্ই প্রতারক তা কিন্তু নয়, প্রতারণা মেয়েরাও করে থাকে। হয়তো সার্বিক হিসেবে এর পরিমাণ বা মাত্রা ততোটা বেশী নয়। 


পরিশেষে বলবো,
সত্যিকার অর্থে ভালবাসা আর প্রেমের সুখ চাই। অনন্ত সুখের বাহন হোক ভালবাসা আর প্রেমের সম্পর্কটা। যেখানে প্রতারক প্রেমিক কিংবা ছলনাময়ী প্রেমিকা থাকবেনা, দুইজনেরই লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকবে সৎ আর মানবিক গুণে ভরপুর। আর প্রেমের সম্পর্কটা যদি সত্যিই মানবিক হয়ে থাকে, চুড়ান্ত পরিণতিটাই যদি দুইজনেরই আকাংখা আর সদিচ্ছা হয়ে থাকে তবে সেখানে ছুঁয়ে দিলাম কি শুইয়ে ফেললাম কোন বাঁধার বিষয় হয়ে থাকেনা। এমন কোন সম্পর্ক আর দেখতে চাইনা যেখানে প্রতিটি পদে পদে কেবল প্রতারণার ফাঁদ। আর সেই ফাঁদের চুড়ান্ত পরিণতিতে থাকবে এমন কোন একটি  সুইসাইড নোট যাতে লিখা থাকবে-
আমি যদি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাইহয়তো সেদিন তুমিও আমাকে আর মনে রাখবে না। আমি জানি সেদিন শুধু দুর  আকাশের নক্ষত্রগুলো আমার কথা স্মরণ করবে কারণ তারাই ছিল আমার প্রকৃত বান্ধব। ওরাই আমার সুখ দুঃখের প্রকৃত ভাগীদার ছিল, তারা আমার চোখে কান্নার জল যেমন দেখেছে তেমনি ঐ চোখের স্বপ্নগুলোর ও স্বাক্ষী তারাই। যদি কখনো আমার কথা মনেই পড়ে যায় তোমার তাহলে পারলে ঐ নক্ষত্রদের কাছ থেকেই জেনে নিও কতটা ভালবেসেছিলাম তোমাকে, কতটুকু বিশ্বাস করেছিলাম তোমাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷

What you say What you do, Think twice before...

- দোস্ত ! দেখ মালডা চরম না ?? - কোনটা ? ও...এইডা ! এইডার কথা কইতে পারিনা, তয় তোগোর বাড়িতে একটা চরম মাল  আছে ! - আমাগোর বাড়িতে ! ক...